শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পূর্বাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি :দেশের স্থলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে। দক্ষিণের জেলা ভোলার শাহবাজপুরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়ার পর এবার পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পদ্মাপাড়ের জেলা মাদারীপুরেও গ্যাসের মজুদ থাকার ব্যাপারে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে এবং প্রয়োজনীয় গ্যাসের মজুদ পাওয়া গেলে বৃহত্তর বরিশাল ও ফরিদপুরে দ্রুতই বড় শিল্প-অবকাঠামো গড়ে উঠবে।
বিদ্যমান গ্যাস সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে স্থলভাগের তিনটি ব্লকে দ্বিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল এবং পিরোজপুর জুড়ে প্রায় ২ হাজার ২২৫ লাইন কিলোমিটার ভূকম্প জরিপ করেছে অনুসন্ধানকারী দল। আরো ৭৭৫ লাইন কিলোমিটার এলাকায় জরিপ পরিচালিত হবে। এ প্রসঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালক ও বাপেক্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মঈনুল হোসেন বলেন, গত বছরের এপ্রিল থেকে এই গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি চলবে। ইতোমধ্যে জরিপের দুই-তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জরিপকৃত এলাকায় মাটির উপরিভাগ থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার নিচ পর্যন্ত ভূকম্প জরিপ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মাদারীপুর ও ভাণ্ডারিয়ায় গ্যাসের উপস্থিতি সম্পর্কে আমরা আশাবাদী। তবে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা এখনও বিশ্লেষণ করা হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে বিশ্লেষণ শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে। তিনি আরো জানান, বিশ্লেষণে গ্যাসের আশানুরূপ উপস্থিতি পাওয়া গেলে ত্রিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ পরিচালিত হবে। ওই জরিপেই এই এলাকায় গ্যাসের মজুদ সংক্রান্ত চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া যাবে।
বাপেক্সের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভোলা ছাড়া দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গ্যাসক্ষেত্রের প্রমাণিত উপস্থিতি এতদিন পাওয়া যায়নি। তবে এখন সুন্দরবনের নিকটবর্তী, পদ্মা নদীর তীরবর্তী এবং বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী এলাকায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ভাণ্ডারিয়ায় বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী এলাকায় সম্প্রতি পরিচালিত জরিপের তথ্য আগ্রহ বাড়িয়েছে।
অনুসন্ধানকারী দলের এক সদস্য জানান, ভাণ্ডারিয়া পয়েন্টে ভূপৃষ্ঠের গভীরতা, ক্যানেল, লেয়ার পর্যালোচনা করে গ্যাস পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চীনা প্রকৌশলীরা। এক্ষেত্রে প্রোম্যাক্স টুডি, জিওক্লাস্টার এবং জিওভ্যাশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ভূ-গঠন পর্যালোচনা করেও গ্যাসের উপস্থিতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখন সংগ্রহকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করার পরই এ বিষয়ে চূড়ান্তভাবে বলা যাবে।
প্রসঙ্গত, দেশে আবিষ্কৃত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে অন্তত দুইটির মজুদ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে। দৈনিক ৪০০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে উত্পাদিত হচ্ছে মাত্র ২৭৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস। তিন বছর আগেও যেখানে ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সংকট ছিল, সেখানে এখন তা বেড়ে ১২৫ কোটি ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। সংকট মোকাবিলায় ১৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থলভাগের তিনটি ব্লকে (৩বি, ৬বি এবং ৭ নং ব্লক) গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে বাপেক্স।
Leave a Reply